সর্বশেষ আপডেট



» বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত

» ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ

» আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া

» গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন 

» ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস

» জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন

» ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন

» ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’

» ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল

» ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”

» ফরহাদনগরে ছাত্রদল নেতা জিয়া উদ্দিনের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পথে ঘুরছে বৃদ্ধা দুই অসহায় বোন

» বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটির পরিচিতি ও শিক্ষার মানোন্নয়নে সভা

» ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ৩৫তম ব্যাচের নবাগত শিক্ষার্থীদের বরণ

» ফেনীতে জলবায়ু পরিবর্তন ও সচেতনতা বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ

» উত্তর চন্ডিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি এম. আনোয়ারুল ইসলাম

» স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বাবুর মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া ও মিলাদ

» বাম গণতান্ত্রিক জোটের ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের রোডমার্চ ফেনী ছাড়লো- দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত 

» সাপ্তাহিক ফেনী সংবাদ এর প্রতিনিধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

» ফেনীতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভে বক্তারা বলেন- মুসলিম ভূখণ্ডে হামলা করে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করা অসম্ভব

» ফেনী জেলা যুবদলের ৫১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা

সম্পাদক: শওকত মাহমুদ
মোবাইল: ০১৮১৩-২৯২৮৩৫
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মোজাম্মেল হক মিন্টু
নির্বাহী সম্পাদক: শাহজালাল ভূঁঞা
মোবাইল: ০১৭১৭-৪২২৪৩৫, ০১৮১৯-৬১৩০০৫

সহ-সম্পাদক: শেখ আশিকুন্নবী সজীব
মোবাইল: ০১৮৪০-৪৪৪৩৩৩
সম্পাদকীয় ও বার্তা কার্যালয়: শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতান(৬ষ্ঠ তলা), স্টেশন রোড, ফেনী-৩৯০০।
ই-মেইল: ajeyobangla@gmail.com

Desing & Developed BY GS Technology Ltd
৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,১৫ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেনী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এক গর্বিত সন্তান

অজেয় বাংলা রিপোর্ট :
সব জাতি পরাধীনতা ও শোষণ-নিপীড়ন-বঞ্চনা থেকে মুক্তি চেয়েছে। সব দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চরিত্র ও স্বাধীনতা অর্জনের প্রক্রিয়া এক রকম নয়। স্বাধীনতার জন্য সব জাতিকেই মূল্য দিতে হয়-রক্ত দিতে হয়। স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের আত্মাহুতি দিতে হয়েছে। সেটা স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত পর্যায়ে। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা ইতিহাস অনেক বিস্তৃত এবং সময়ের গভীরে তার শিকড়। তা শুধু ঘটনা নির্ভর নয়-চেতনা নির্ভর। তার সঙ্গে এই ভূখন্ডের মানুষের সংস্কৃতি অর্থাৎ ভাষা, সামাজিক আচার-আচরণ, রীতিনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম-জীবনের যাবতীয় বিষয় যুক্ত।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অকল্পনীয় সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন এমন এক সাহসী, মহৎ, উদার ও নিবেদিত প্রাণ হিসেবে স্বীকৃত পরিবারের অবদানের কিছু স্মৃতি কথা এ লেখায় তুলে ধরা হলো-
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের গর্বিত সন্তান ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ আজিজ আহম্মদ চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেলেন। গত ২৫ নভেম্বর রাতে গণভবনে ৬১ জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানদের সাথে ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে তাঁর নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ফেনীতে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী ওবায়দুল হক তাঁর মনোনয়নপত্রে প্রতারণা করে প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর স্বাক্ষর জাল করে জমা দেয়ায় যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন। অপর প্রার্থী আজিজুল বারী চৌধুরী গত ১০ ডিসেম্বর তাঁর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আর কোনো প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা স্বচ্ছ রাজনীতিক আজিজ আহম্মদ চৌধুরী।
তিনি অত্যন্ত সততা, সুনাম ও দক্ষতার সাথে বিগত ২০১১ সাল থেকে ফেনী জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন সফল জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও তাঁর রয়েছে দারুন সুখ্যাতি। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নিবেদিত প্রাণকর্মী হিসেবে তিনি জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়েও একজন দৃঢ়চেতা মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ছুটে বেড়াচ্ছেন মাঠে-প্রান্তরে। সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য পৌঁছে দিচ্ছেন তৃণমুল মানুষের কাছে। একজন জনবান্ধব রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসক হিসেবে সুপরিচিত এই মহতিপ্রাণ মানুষটির পরিবারের পাঁচজন সদস্য ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন। তাঁর পরিবারের সেই অবিস্মরণীয় বীরত্ব গাঁথা তুলে ধরা হলো এই লেখায়-
ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর হোসেন উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য কর্তৃক প্রাপ্ত তালুকদার ছিলেন। নিজ এলাকায় তিনি খুব জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর একমাত্র সন্তান সুলতান আহম্মদ চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান ফেনী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরী। প্রয়াত সুলতান আহম্মদ চৌধুরী পুলিশের চাকুরী সূত্রে তিনি ময়মনসিংহ জেলায় জমি ক্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আজিজের নেছা চৌধুরানীর সাথে। তাঁদের সংসারে ৪ ছেলে, দুই কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। আজিজ আহম্মদ চৌধুরী, আমির আহম্মদ চৌধুরী, আমিন আহম্মদ চৌধুরী, আনিছ আহম্মদ চৌধুরী, বেগম চাঁদ সুলতানা রহিমা খানম ও বেগম আফরোজা চৌধুরী।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে সর্বপ্রথম স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি জনতা, বাংলার মানুষ জেগে উঠলো। ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মম হত্যাকান্ড ও অত্যাচার চালায়। তখন আজিজ আহম্মদ চৌধুরী তাঁর পরিবার নিয়ে ফেনীর কলেজ রোড বাসায় থাকতেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ফেনী শহরে পাকিস্তানী বাহিনীরা হেলিকপ্টার থেকে বোম্পিং করল। এতে তাঁর বাসার কাজের মেয়েও মারা যায়। এ ঘটনায় ফেনীর প্রয়াত সাংবাদিক অর্ধ সাপ্তাহিক পথ’র সম্পাদক এ অদুদ সাহেব তাঁর একটি পা হারান। তখন চট্টগ্রাম থেকে পথহারা লাখ লাখ মানুষ বাঁচার লক্ষে পায়ে হেঁটে আসছে ফেনীর দিকে। তারা ফেনীর বর্ডার হয়ে যাবে ভারতে। রাস্তাঘাটে, চলার পথে দেখা যায় মানুষের হাহাকার। মরহুম খাজা আহম্মদের নেতৃত্বে তৎকালীন সিও অফিস বর্তমানে ফেনী সদর উপজেলা পরিষদে সবাই একত্রিত হয়। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে সশস্ত্র যুদ্ধ হয়। এপ্রিল পর্যন্ত ফেনী পাক হানাদার মুক্ত ছিল। পরে আজিজ আহম্মদ চৌধুরী তাঁর পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান। তাঁর দাদা হোসেন আহম্মদ চৌধুরী যুদ্ধকালীন সময়ে ৮০ বছরের বৃদ্ধ। তিনি চলাফেরায় ছিল সক্ষম। তিনি দেশ ছেড়ে যাবেন না। তাঁর কথা ছিল মরলে এদেশেই মরবো। পাক-বাহিনী তাঁকে বাঁচতে দেয়নি। তাঁদের একই পরিবারের ৫ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
১৯৭১ সালের ১৬ জুন ফুলগাজীর আনন্দপুরে তাঁদের বাড়ির পুকুরের দক্ষিণ কোণে বাঁশঝাড়ের পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদরা হলেন- আলহাজ্ব হোসেন উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, তাঁর ভাই হাজী বদিউজ্জামান চৌধুরী, ভাগিনা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ভাতিজা আলহাজ্ব মকবুল আহম্মদ চৌধুরী এবং মমতাজ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। আর কোথাও কোন লোকজন নেই গ্রামশূণ্য হয়ে পড়ে। বিলোনিয়ার পাক বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তুমুল যদ্ধ চলছে। জাফর ইমাম বীর বিক্রমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দপুরে সিলোনিয়া ব্রীজও সফিউল্যা খালের ওপর ব্রীজ বোম্পিং করে উড়িয়ে দিলেন। দিন দিন যুদ্ধ বাড়তে থাকে। মে মাসের প্রথম দিকে আজিজ আহম্মদ চৌধুরী তাঁর পরিবার নিয়ে প্রথমে গিয়ে উঠলেন ফুলগাজীর কহুয়ায় পরে ভারতের একিমপুর, রাজনগর ও চোত্তাখোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধের সময় নানা কষ্টে দিনাতিপাত করেছেন।
পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর দাদা হোসেন আহম্মদ চৌধুরীকে স্মরণীয় করে রাখতে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে ১৯৯৩ সালে নাতিরা স্বনামধন্য দাদার নামে ফেনী কলেজ রোডের ‘শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতান’ নামে সুবিশাল বিপনী বিতান নির্মাণ করেন।
আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর ২য় ভাই আমির আহম্মদ চৌধুরী ময়মনসিংহের গৌরিপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছিল। তিনি চাকুরী ছেড়ে ময়মনসিংহে মুকুল নিকেতন নামে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২১০ জন শিক্ষক ও সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাঁর পিতৃভূমি ফেনী হলেও বাবার কর্মস্থল ময়মনসিংহেই স্থায়ী বসবাস। মুকুল ফৌজের সংগঠক আমীর আহম্মদ চৌধুরী (রতন দা নামেই বহুল পরিচিত) ময়মনসিংহের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতের এক বিশিষ্ট নাম। ছোটবেলা থেকেই ক্রীড়া, বিশেষ করে ক্রিকেটের প্রতি ছিলেন আকৃষ্ট। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে ময়মনসিংহ জেলায় ছিল এক অগ্রণী ভূমিকায়। আমির আহম্মদ চৌধুরী ক্রীড়ামোদী, সংস্কৃতি প্রেমী, পরোপকারী ও মহৎ ব্যক্তি। তার মহত্ত্বের গুণে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী আর্মির কাছ থেকে মৃত্যুর হাত থেকে জীবনে রক্ষা পান।
১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় ময়মনসিংহে বসবাসরত ইরানীদের ওপর বিভিন্ন অত্যাচার-নির্যাতন ও লুটপাট চালিয়েছিল পাকিস্তানী দোসররা। আমির আহম্মদ চৌধুরীর নিকট ইরানীরা দুটি বস্তা জমা রেখে যায়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর ইরানীদের ওই বস্তা দুটি ফেরত নিয়ে যায়। পরে জানা যায় বস্তাগুলোতে ছিল টাকা ও স্বর্ণ। এ ঘটনার পর থেকে ওইখানে থাকা ১২০০ ইরানী পরিবার তাকে ফেরেস্তা হিসেবে জানত। তিনি দেশপ্রেম, সৎ ও মহত্ত্বগুণের অধিকারী।
আমিন আহম্মদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় পাক-হানাদার বাহিনীরা ময়মনসিংহের বাসা ঘেরাও করে আমির আহম্মদ চৌধুরীকে সেনাবাহিনীর টর্চার সেলে নিয়ে যায়। সেনাবাহিনীরা তাকে নির্মম নির্যাতন চালায়। শেষমেষ তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় ইরানীরা খবর পেয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে। অনুরোধ করে এ মহৎ ব্যক্তিকে মারতে হলে আগে আমাদের ১২শ ইরানী পরিবারকে মেরে তারপর তাঁকে মারবেন। ইরানীদের এ ধরনের আকুতিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা পরে আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর বাবা সুলতান আহম্মদ চৌধুরীর নিকট আধমরা অবস্থায় আমির আহম্মদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টির রৌশন এরশাদের সাথে সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতে পারেননি।
আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর তৃতীয় ভাই আমিন আহম্মদ চৌধুরী ১৯৬৬ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হলে বিগ্রেডিয়ার মজুমদারের সাথে তাঁকে পাক হানাদার বাহিনীরা ঢাকা সেনানিবাসে বন্দি করে রাখেন। ঢাকা সেনানিবাস থেকে চতুরতার সাথে দেয়াল টপকে পালিয়ে নানা কষ্টে ফেনী চলে আসেন। পরে ভারতে গিয়ে ময়মনসিংহের বর্ডারে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। জুন মাসে ওই সেক্টরে চলছিল পানি যুদ্ধ। পাকিস্তানীদের ছিল শক্ত অবস্থান। তিনি সাহসিকতার সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। এক পর্যায়ে তার গুলি শেষ হয়ে যায়। তার হাতে গুলি লাগে ও পায়ে মর্টার শেল লাগে। পানিতে ভাসমান অবস্থায় পরে থাকে।
১৯৭২ সালে যখন বিজয়ের আনন্দে সারা দেশ ভাসছে, তখন আমিন আহম্মদ চৌধুরী পূর্ব জার্মানির হাসপাতালে সারা বুকে গুলি নিয়ে চিকিৎসায় আছেন। সেই সময় ভূপেন হাজারিকা তাঁকে কোলে করে যুব উৎসবের অনুষ্ঠানে গান গাইছেন। অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ভূপেন হাজারিকা সেই সময়ের স্মৃতিচারণায় এ কথা বলছিলেন। ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধরত অবস্থায় একেবারেই সামনে চলে এসেছিলেন, গুলিতে তাঁর বুকটা প্রায় ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল, অধিনায়ক আমিনুল হক রক্তাক্ত ক্যাপ্টেন আমিন আহম্মদ চৌধুরীকে কোলে করে নিয়ে হেলিকপ্টারে তুলে দেন। প্রাণে বেঁচে যান ক্যাপ্টেন আমীন। তারপর ফিরে আসেন সেনাবাহিনীতে। অদ্ভুত মানুষ ছিলেন তিনি। যেখানেই গেছেন, গড়ে তুলেছেন। চোখে-মুখে-কাজে সর্বত্রই আশা, স্বপ্ন। সেনাবাহিনীর বাইরেও যখন যেখানে দায়িত্ব পেয়েছেন, সেখানেই একটা কিছু গড়ে তুলছেন। মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টে একসময় এলেন। ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তোলার জন্য কী আপ্রাণ চেষ্টা! মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটা কিছু করতে হবে। তারপর তিনি বাংলাদেশ চা বোর্ডে। ঘুরে  বেড়িয়েছেন চা-বাগান থেকে চা-বাগানে। চায়ের রপ্তানি কী করে বাড়ানো যায়। স্বপ্নতাড়িত আমিন শুধুই চায়ের উৎপাদন বাড়ানো নয়, রপ্তানি নয়, চা-বাগানের কর্মরত যাঁরা আছেন, তাঁদের ছেলেমেয়েদের জন্য বিদ্যালয় করতে হবে। ইংল্যান্ড থেকে শিক্ষক নিয়ে এসে দার্জিলিং বা কালিম্পংয়ের মতো বিদ্যালয় করতে হবে। বহুদূর এগিয়ে গেলেন সেই স্বপ্ন নিয়ে।
আবার ফিরে গেলেন সেনাবাহিনীতে। পদোন্নতি হলো। ১৯৯৩ সালে ব্রিগেডিয়ার থেকে মেজর  জেনারেল পদোন্নতি পেয়ে সেনাসদরে অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে তিনি প্রেষণে ওমানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদান করেন। ওমানের রাষ্ট্রদূত থাকা অবস্থায় কূটনৈতিক স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ওমানের সুলতান কর্তৃক রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন। আমিন আহম্মদ চৌধুরী ওমান থেকে ২০০১ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
মেজর জেনারেল আমিন আহম্মদ চৌধুরী অত্যন্ত ক্রীড়ামোদী ছিলেন। ১৯৮৫ সালে আমিন আহম্মদ চৌধুরী সার্ক সম্মেলনের পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে তা সুন্দরভাবে পালন করেন।
সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকার সময়ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য যা কিছু করণীয়, তাতে পিছপা হননি, তার একটা নিদর্শন গাজীপুর চৌরাস্তার ভাস্কর্যটি। খুঁজে বের করলেন ভাস্কর আবদুর রাজ্জাককে। তাঁকে দিয়ে দ্রুত একটি নকশা করে গড়ে তুললেন ভাস্কর্যটি। এসব কাজ তাঁর জন্য নির্বিঘœ হয়নি। সেনাবাহিনীর মধ্যেও তিনি একটা একাডেমিক পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করতেন। নিজেরও ছিল লেখাপড়ার অভ্যাস। সুযোগ পেলেই বই নিয়ে বসতেন। গভীর রাত পর্যন্ত আলো জ্বলত তাঁর ঘরে। কখনো যুদ্ধবিষয়ক বই, কখনো ইতিহাস এমনকি ভাওয়াল সন্ন্যাসীকে নিয়েও বিস্তর গবেষণা করেছেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কলাম লেখা শুরু করেছিলেন। ছিলেন প্রচারবিমুখ। জীবনের শেষের কটা বছর অবশ্য সভা-সমিতিতে যেতেন,  টেলিভিশনের টক শোতে আসতেন, বিশেষ করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম গঠিত হওয়ার পর।
সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা এবং রণকৌশলের শিক্ষাকে তিনি ব্যাক্তিজীবনেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করতেন। যে কাজটি ধরবেন, তা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করতেন। মাঝপথে ফেলে দিতেন না বা  থেমে যেতেন না। জীবিকার জন্য কাজ, বাকি সব সময় দেশ, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র রক্ষায় এসবই তাঁর কর্তব্য। কূটনীতিক হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। তাঁর মত নির্ভীক, সত্যবাদী মানুষ আজ বিরল।
২০১৩ সালের ১৯ এপ্রিল এই মহান পুরুষ, মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল আমিন আহম্মদ চৌধুরী ঢাকার নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। যদিও সবার বিশ্বাস, তিনি এখনো জীবিত। কারণ, তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী।
আজিজ আহম্মদ চৌধুরী ১৯৭২ সালে ফেনী শহরে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে ছাগলনাইয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক, ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৯ এর মধ্যভাগ পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালের মধ্যভাগ থেকে ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্ঠার সাথে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
২০১১ সালে ১৫ ডিসেম্বর আজিজ আহম্মদ চৌধুরী জেলা পরিষদ প্রশাসকের দায়িত্বপ্রাপ্তির পর নিরলসভাবে জেলার মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এ পদ প্রাপ্তিতে জেলার তৃণমূল মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন। এতেই তিনি খুশী। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির জাতীয় পরিষদের সদস্য। জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে তিনি তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ইটালি ও গ্রীস ভ্রমণ করেছেন। সারাদিনমান জেলার সর্বত্র ঘুরে ঘুরে মানুষের কোথায় কি অসুবিধা, এসব দেখে শুনে নিরলস কাজ করে চলেছেন।
উল্লেখ্য, তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এক নাগাড়ে ২৪ বছর আনন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
আজিজ আহম্মদ চৌধুরী ১৯৬৬ সালে বেগম রোকেয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর স্ত্রী রোকেয়া আজিজ (বি.এ.বি.এড) শিক্ষকতা করতেন। তিনি এনজিও শাপলা কুঁড়ির ফেনী শাখার প্রধান ছিলেন। ফেনী পৌরসভার প্রধান কমিশনার ছিলেন। তিনি ফেনী মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ও লেডি ক্লাবের সেক্রেটারী থেকে ফেনী জেলা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ফেনী সরকারী জিয়া মহিলা কলেজের পরিচালনা পর্ষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তাঁদের দুই ছেলে নওশাদ আজিজ (রাজন), রিয়াদ আজিজ (রাজীব) ব্যবসায়ী ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দুই মেয়ে রুবাইয়াত ও নুসরাত আজিজ শিক্ষকতা করেন। ২০১১ সালে রোকেয়া আজিজ মৃত্যুবরণ করেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



সম্পাদক: শওকত মাহমুদ
মোবাইল: ০১৮১৩-২৯২৮৩৫
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মোজাম্মেল হক মিন্টু
নির্বাহী সম্পাদক: শাহজালাল ভূঁঞা
মোবাইল: ০১৭১৭-৪২২৪৩৫, ০১৮১৯-৬১৩০০৫

সহ-সম্পাদক: শেখ আশিকুন্নবী সজীব
মোবাইল: ০১৮৪০-৪৪৪৩৩৩
সম্পাদকীয় ও বার্তা কার্যালয়: শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতান(৬ষ্ঠ তলা), স্টেশন রোড, ফেনী-৩৯০০।
ই-মেইল: ajeyobangla@gmail.com

Design & Developed BY GS Technology Ltd

error: Content is protected !!